CALL FOR APPOINTMENT: 09638-334466

CALL FOR APPOINTMENT: 09638-334466

কোমর ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার

কোমর ব্যথা হলো একটি অতি পরিচিত সমস্যা, যা প্রায় সব বয়সী মানুষকেই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে ভোগায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা প্রায় ৮৫% মানুষ জীবনের কোনো এক পর্যায়ে কোমর ব্যথায় ভুগে থাকে। তাই, কোমর ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কোমর ব্যাথার সাধারণত অনেকগুলো কারণের জন্য হতে পারে। তবে, আজকালকার কর্মজীবী মানুষের মধ্যে এর প্রধান কারণ হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করার অভ্যাসকে দায়ী করা হয়। বসার সময় শরীরের সঠিক ভঙ্গি বজায় না রাখার ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে কোমর ব্যথা অন্যতম।

কোমর-ব্যাথার-কারণ-ও-প্রতিকার

দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ক্ষতিকর প্রভাব

দীর্ঘ সময় ধরে একটানা বসে কাজ করার ফলে শরীরের বেশ কিছু অংশে, বিশেষ করে কোমর, পিঠ এবং ঘাড়ে, ব্যথা দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ অফিস কর্মী দিনের বেশিরভাগ সময় ডেস্কে বসে কাটায়। এই দীর্ঘ সময় বসে থাকার কারণে শরীরের মেরুদণ্ডের সামনের দিকের মাংসপেশি সংকুচিত হয় এবং পেছনের দিকের মাংসপেশি প্রসারিত হয়।

এর ফলে শরীরের মাংসপেশির ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়, যাকে মাসকুলার ইমব্যালেন্স (Muscular Imbalance) বলা হয়। যখন এই ইমব্যালেন্স ঘটে, তখন মেরুদণ্ডের মাঝখানে থাকা ডিস্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এই চাপ ধীরে ধীরে ব্যথার সৃষ্টি করে যা সময়ের সাথে তীব্র হতে পারে।

বসার ভঙ্গির ত্রুটি

অফিসে কাজ করার সময় সঠিক ভঙ্গিতে না বসলে কোমর ব্যথার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। অনেকেই কাজের সময় চেয়ারে বসে শরীরকে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে কাজ করেন, যা কোমর এবং পিঠের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। এছাড়া, পেটের মাংসপেশি এবং পায়ের সম্মুখভাগের মাংসপেশি সংকুচিত থাকতে থাকে।

দীর্ঘ সময় ধরে এভাবে সংকুচিত থাকার ফলে মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায় এবং পিঠ ও কোমরের পেছনের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। এই ভারসাম্যহীনতার কারণে মেরুদণ্ডের ডিস্কের স্থানচ্যুতি ঘটে, যা প্রলাপস লামবার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক (PLID) হিসেবে পরিচিত।

PLID হলে দুটি কশেরুকার মধ্যে থাকা কোমরের নরম অংশ, যা ডিস্ক নামে পরিচিত, তা বের হয়ে বাইরের দিকে চলে আসে। ডিস্কের বাইরের দিকে অ্যানুলাস ফাইব্রোসাস নামে একটি শক্ত আবরণ থাকে, যা আঘাত বা ক্ষয়ের কারণে ছিঁড়ে গিয়ে ভেতরের নরম জেলির মতো অংশ বের হয়ে আসে। এই বের হওয়া অংশ নার্ভের রুটকে চাপ দেয়, ফলে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং সেই ব্যথা পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। একে সায়াটিক পেইনও বলা হয়।

চেয়ারের কাঠামোগত ত্রুটি

কেবল বসার ভঙ্গি নয়, বসার চেয়ারের কাঠামোগত ত্রুটিও কোমর ব্যথার একটি বড় কারণ হতে পারে। অনেক সময় চেয়ারটি শরীরের আকার ও ভঙ্গির সাথে মানানসই না হলে মেরুদণ্ডের ওপর অস্বাভাবিক চাপ পড়ে। এর ফলে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক প্রান্তরেখা (natural curvature) নষ্ট হয় এবং কোমরের হাড়ের ডিস্কগুলির ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়, যা PLID-এর মতো গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চেয়ারটি যদি সঠিক উচ্চতা ও সমর্থন প্রদান না করে, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে মেরুদণ্ডের ক্ষতি করতে পারে।

সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা

কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। অনেকেই কোমর ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে অবজ্ঞত না থাকার কারণে ব্যথাকে সামান্য মনে করে উপেক্ষা করেন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন চালিয়ে যান। যা দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সঠিকভাবে চিকিৎসা না করালে কোমর ব্যথা আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে, যার ফলে দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে সমস্যা হতে পারে এবং জীবনের মান নিম্নগামী হতে পারে।

একজন দক্ষ Chiropractor বা Osteopathic চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিকভাবে বসার ভঙ্গি নির্ধারণ করা এবং সঠিক ব্যায়ামের ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Chiropractor বা Osteopathic চিকিৎসা পদ্ধতি হলো এক ধরনের শারীরিক চিকিৎসা, যা শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা নিরাময়ে সহায়তা করে থাকে। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে মেরুদণ্ডের ভারসাম্যহীনতা ও পেশির সমস্যাগুলিকে সমাধান করা হয়, যা কোমর ব্যথার মূল কারণগুলোর একটি। সঠিক ব্যায়ামের মাধ্যমে মাংসপেশির সংকোচন ও প্রসারণের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব, যা কোমর ব্যথা প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।

সঠিক বসার ভঙ্গি এবং ব্যায়ামের গুরুত্ব

কর্মস্থলে দীর্ঘ সময় বসে কাজ করতে হলে সঠিক ভঙ্গিতে বসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ভঙ্গিতে বসার জন্য প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে যে চেয়ারের উচ্চতা এবং পিঠের সমর্থন সঠিকভাবে মেরুদণ্ডকে সমর্থন দিচ্ছে। পায়ের তলা মাটিতে সঠিকভাবে স্থাপন করতে হবে এবং হাঁটু ৯০ ডিগ্রী কোণে বাঁকানো থাকতে হবে। ডেস্কের উচ্চতা এমন হওয়া উচিত যাতে কম্পিউটারের স্ক্রিন চোখের সমান্তরালে থাকে এবং হাতের কনুই ৯০ ডিগ্রী কোণে বাঁকানো থাকে। এর ফলে মেরুদণ্ডের ওপর চাপ কম পড়ে এবং কোমর ব্যথার ঝুঁকি হ্রাস পায়।

সঠিক বসার ভঙ্গির পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়ামের মাধ্যমে মাংসপেশির সংকোচন ও প্রসারণের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হয়, যা কোমর ব্যথা প্রতিরোধে সহায়তা করে। বিশেষ করে, কোমরের পেছনের মাংসপেশি এবং পিঠের মাংসপেশিকে মজবুত করার জন্য ব্যায়াম করা উচিত। এছাড়া, পেটের মাংসপেশি এবং পায়ের সম্মুখভাগের মাংসপেশি শক্তিশালী করার জন্যও বিশেষ ব্যায়াম করা প্রয়োজন।

কোমর ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়

কোমর ব্যথা প্রতিরোধে কিছু কার্যকর করণীয় রয়েছে, যা নিয়মিতভাবে পালন করলে এই সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।

১. সঠিক ভঙ্গিতে বসা:

অফিসে কাজ করার সময় সঠিক ভঙ্গিতে বসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চেয়ারের উচ্চতা ও পিঠের সমর্থন যেন মেরুদণ্ডকে সঠিকভাবে সমর্থন করে তা নিশ্চিত করতে হবে।

২. নিয়মিত বিরতি নেওয়া:

দীর্ঘ সময় ধরে একটানা বসে থাকা যাবে না। প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ছোট ছোট বিরতি নিতে হবে এবং একটু হাঁটাহাঁটি করতে হবে।

৩. ব্যায়াম করা:

প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। বিশেষ করে কোমর, পিঠ ও পেটের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যায়াম করা উচিত।

৪. সঠিক চেয়ার নির্বাচন:

অফিসে কাজ করার জন্য সঠিক চেয়ার নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চেয়ারটি যেন মেরুদণ্ডের প্রাকৃতিক আকারের সাথে মানানসই হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া:

কোমর ব্যথা হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। Chiropractor বা Osteopathic চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে কোমর ব্যথা নিরাময় করা সম্ভব।

সময়ের সাথে সাথে কোমর ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, কোমর ব্যাথার কারণ ও প্রতিকার জানা প্রতিটি মানুষের জন্যে প্রয়োজন। সঠিক সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। কোমর ব্যথা শুধু শারীরিক কষ্টই দেয় না, এটি দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই, কোমর ব্যথা প্রতিরোধে সঠিক বসার ভঙ্গি, নিয়মিত ব্যায়াম এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top

Book an appointment